Saturday, July 20, 2019

কবিতা - পায়েল দেব






খনন


খোঁড়াখুঁড়ির কাজ প্রায় শেষ
তাঁবুও আর বাঁধ মানছে না এমন বাতাসে
নড়াচড়ায় অনাবিল আনন্দের শব্দ
আজ রাতেই গুটিয়ে নিতে হবে সব
আস্ত মূর্তিগুলো প্যাকিং হচ্ছে আলাদা
আর যাদের ভাঙা হাত, কানের অর্ধেকটা খুঁজে পাওয়া যায়নি তাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে অন্যত্র

বনের বুক চিঁড়ে হাঁটছি
কচি ঘাস, নিষ্পাপ পিঁপড়ের হামাগুড়ি অনিচ্ছায় চ্যাপ্টা করে হাঁটছি
তাদের ব্যথা ছুঁয়ে বনের পরিধি

হামানদিস্তা টাইপের কিছুতে পা আটকে আছে
দূরে মরুদেশ, আরাধনা ঘর 
আলো আসলে দেখি বৃত্তের স্পর্শক বরাবর দাঁড়িয়ে আছি

পূজা


সারাদিন রোদ, সন্ধ্যায় নেমেছে প্রগাঢ় বৃষ্টি
অন্ধকার হাওয়া চিৎকার করে পেরিয়ে যাচ্ছে গাছ আর পাখি শাবকের ঘুম
এখন মঘা, সময় অশুভ
গ্যাপে গ্যাপে ঘর, দরজা বন্ধ
ভেতরে বিপদতাড়ানি যজ্ঞ
বাইরে পায়ের আঙুল ছুঁয়ে সুবিশাল নিরবতা
নুয়ে নুয়ে হাঁটি, কেউ কেউ হামা দেয়
ঠিক ৫'৭" উপর দিয়ে
একজন ডাইনি ঘুমের ছাঁচে ঢালাই করে যাচ্ছে ছাদ
সমান্তরাল দূরত্ব।

 গবেষণাগার

নিউটন আর ইউক্লিড শেষ কবেই
এখন ও বাড়িতে আমার না-করা সংসার বাড়ে

সেলফোন কানে লাগালে
কান্নার মতো ঝনঝন করে পুরানো গিটার
দেওয়ালের ফাটল গলে তড়িঘড়ি ঢোকে আবার বেরিয়ে যায়
কেননা,গুহার মত চ্যাটরুম বহুদূরে।

এভাবে ভারসাম্য পাল্টাতে পাল্টাতে পৃথিবীতে খুব বড় রকমের রাত জাঁকিয়ে বসবে...


 স্ক্রীন


এসব একসাথে নেমে পড়া সিরিয়াল দুপুরগুলি
ক্যাবলা করে ফেলে রাখে স্তব্ধতায়
ইমোশনের স্ক্রীনশট ভাসে গরম গরম রোদের ভেতরে

সে কবেকার কথা
মেয়েদের বুকে স্কুল ড্রেসের নীল কুঁচির ঢাকনি
ছেলেদের লোমশ পা ঢাকা লং প্যান্ট
তবু কি আড়াল হয় বয়স?

রাস্তা বরাবর সোজা উত্তরে হাঁটলে...
এখনও দুপুরের ভেতর মৈথুন আর মেহেন্দির আশা নিয়ে
সটান দাড়িয়ে আছে ইউক্যালিপটাশের দল
ছাল পাল্টে বাড়ছে গ্লেমারাস বয়স

নতুন সংসারে পাখি-করা বেডকভার
ফুল-করা চঞ্চল ফুরফুরে পর্দা
রোদের দিকে হাত বাড়াই
সরু আঙুলগুলি একবার জড়ো করি আবার ফাঁক করি।

সুখনিদ্রা


ধরো,যদি মরফিয়াসকে মেরে ফেলি
অথবা তার ডানা দুটো কেটে বেঁধে রাখি আফিমগাছের সাথে

দাঁড়াও, তাকে মেরে ফেললে আমাকে ধর্মবিরোধী বলার কোনও কারণ নেই।
কেননা তিনি পাখির মত স্বাধীন নন
কখনোই বিনিদ্র লোকের মাঝে পা রাখেননি
বেশ্যালয়ে যাননি কোনওদিন
বাচ্চাদের সাথে খেলা অনেক দূরের কথা
কেবল ঘুমিয়ে গেলে জড়তায় আচ্ছন্ন করে
হাসিয়ে কাঁদিয়েই ঈশ্বর হয়েছেন

চলো, সবাই মিলে মরফিয়াসকে মেরে ফেলি
এসব ধর্মের গ্লানি আর ঈশ্বরের দান থেকে মুক্ত করে ফেলি নিজেদের।




No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

চলচ্চিত্র নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত? ঋত্বিক ঘটক :   চলচ্চিত্র তৈরির প্রাথমিক লক্ষ্য মানবজাতির জন্য ভাল কিছু করা। যদি আপ...

পাঠকের পছন্দ