স্মৃতি আমাদের
ভারাতুর করে? না না, স্মৃতি তো আমাদের খুলেও দেয়। আমাদের দেয় উড়ান, আমরা আমাদের
বয়সের খাঁচা ভুলি, আবার উড়ি, আবার উড়ি । ওরে ওরে ছাগলছানা উড়িস নে রে উড়িস নে,
ভুলেই তো ছাগলছানা লাফায়।
জীবনে আনন্দের
বাইরেও তো দুঃখ থাকে। সেসব শোক ভোগ আমাদের গায়েই লাগে না। আমরা ভুলে যেতেই পারি
সেসব।
*
এই জীবনে কত
কিছু হয়, হল। কিন্তু সবকিছুর পর, শূন্যস্থান পূরণেরই গল্প হয়ে ওঠে সবকিছু। সেই যে
, রুলটানা বঙ্গলিপির ফিরফিরে “রেশনে পাওয়া” সাদা মলাটের খাতায় লিখতাম...
শূন্যস্থান পূরণ করো!
আর তার আগে ও
পরে, নানা শূন্যস্থান পূরণ হয়েই চলে হয়েই চলে। সব অভিজ্ঞতা নিজস্ব স্থান বদল করে।
কলকাতার গায়ে খোস পাঁচড়ার মত জেগে ওঠে পার্কবোজানো বাড়ি, কারখানাবোজানো শপিংমল,
পুকুরবোজানো বহুতল। ময়দানের ফাঁকা ফাঁকা মেলার মাঠে , রবীন্দ্রসদনের উল্টোদিকে গজিয়ে ওঠে এখন
সিটিজেন্স পার্ক বা মোহর কুঞ্জ। পাড়ার গাছতলায় মন্দির গজিয়ে ওঠে। গাছ কেটে গ্যারেজ
গজিয়ে ওঠে।
২
ভাগ্যগুণে
জন্মেছি দক্ষিণ কলকাতার মধ্যবিত্ত পাড়ায়। ভবানীপুরে।
ভবানীপুরের এই
পাড়াটি খুব নিরবিলি তখন। বড়রাস্তার একেবারে কাছে কিন্তু বড়রাস্তার হুলুস্থুলটা এসে
পৌঁছয় না। গাছপালা দেখা যায় চোখ বাড়ালে। আর অনেকগুলো বস্তি। একটু পুরনো বস্তি
সেগুলো, বিহারি বাঙালি ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকে।
এই পাড়ার
কোনাচে একটা প্লটে আমাদের বাড়ি। একটেরে একটা চিলতে বারান্দা, অদ্ভুত গোলচে,
পাঁচকোণা কয়েকটা ঘর। নিচে লাল গ্যারেজ।
সব মিলিয়ে এই
বাড়িতেই আমার প্রথম জীবন কেটেছে। বাড়িটার নাড়ী আমার নাড়ীর সঙ্গে মিশে গেছে। আর
আমার মায়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছে এই বাড়ি। এই বাড়িতে তিনি জীবনের চুয়াল্লিশটি বছর
স্বামীহীন অবস্থায় দুই মেয়েকে মানুষ করে, তারপর একগাদা বেড়াল একটি কুকুর নিয়ে
কাটিয়েছেন, আমার দিদি বিদেশ যাবার পর, আমি বিয়ে করবার পর মা শেষ দশটি বছর সম্পূর্ণ
একাই কাটিয়েছেন ওই বাড়িতে।
আমাদের বাড়িটা
একটা গলির মধ্যে, গলিটা পাকিয়ে পেঁচিয়ে বেরিয়েছে একটা মাঠের পাশে, মাঠটার নাম তেইশ
পল্লীর মাঠ। উল্টোদিকে মিলনীর মাঠ। আর গলিটা পেরোবার আগেই আরো ছোট একটা মাঠ পার
হতে হয়, সেই মাঠটা চৌধুরী বাড়ির সম্পত্তি, সব মাঠই ফাঁকা আর খুব অগোছালো। সাজানো
নয়। তবু মাঠ। ঘাস নেই, তবু মাঠ।
তেইশ পল্লীর
মাঠের ঠিক পাশেই হরিণঘাটার দুধের ডিপো।
সক্কাল সক্কাল
উঠে, আমাদের বাড়ির জন্য, হরিণঘাটার দুধ-টা, আনতে যেত বিন্তিদিদি। বিন্তিদিদি দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মেয়ে। আমাদের
বাড়িতে কাজ করত। দুধের একটা একটু পুরু, ঘোলাটে সাদা, বিশ্রি দেখতে কার্ড হয়, সেটার
গায়ে প্রতিদিনের খোপ কাটা কাটা থাকে। যেদিনের দুধ দেবে, সেদিনের ঘরে ঢ্যাঁড়া পড়বে।
মাসের শেষে লম্বা লাইন দিয়ে টাকা জমা দিয়ে আসতে হবে। নয়ত পরের মাসের কার্ড পাওয়া
যাবে না। সেই দুধ আনার পর কতবার যে রুপোলি ফয়েলের ছিপি খুলে বোতলের ভেতরে কেটে
যাওয়া দুধের ছাড়া ছাড়া জলছবির মত দৃশ্য! মায়ের চীল চীৎকার, দেরি করে গেছিস বিন্তি
, আজো দুধ কেটে গেছে।
সবার শেষে
হেলতে দুলতে যেত বলেই, কখনো ভাল দুধ পেত না বিন্তিদিদি? সবার নেওয়া হয়ে যাবার পর , একটা দুটো বাজে দুধের
বোতল পড়ে থাকত। আর একবার তো দুধের মধ্যে
মরা টিকটিকিও পাওয়া গেল। রোজ যেন সান্টা ক্লজের উপহারের মত দুধের ওই লম্বাটে কাচের
বোতলের মুখের ছিপি সরিয়ে কী না কী আবিষ্কারের উত্তেজনা মায়ের।
বিন্তিদিদি
একবার মায়ের অনুপস্থিতিতে তার দেশের বাড়ি থেকে আসা দাদার সঙ্গে নিচের ঘরে খুব গল্প
করছিল। আমরা ওপরে হোমওয়ার্ক করছিলাম, মা অনেক ক্ষণের জন্য গিয়েছিল কোথায় যেন।
বিন্তিদিদি গিয়ে নিচের ঘরে গল্প করছিল।
এমন সময় মা
ফিরে এল।
খানিক পরে
দেখলাম বিন্তিদিদি চোখ মুছতে মুছতে ব্যাগ বাক্স বেঁধে চলে যাচ্ছে। যে বিন্তিদিদি
আমার ওয়ার্ক এডুকেশনের প্রচুর কাজ করে দিত, সে চলে যাওয়াতে আমাদের সবার অসুবিধে
হয়েছিল। আমার ওয়ার্ক এডুকেশনের অসুবিধে, মায়ের রান্না ঘর সামলানোর অসুবিধে, আর
দিদির নতুন একটা কাজ হলঃ দুধ আনতে যাওয়া।
৩
তখন আমিও একটু
আধটু মুদির দোকান অব্দি যেতে শুরু করেছি। একটা কোমরে জড়ানো স্কার্ট ছিল, জয়পুরি।
ম্যাক্সির ওপর একটা টপ চড়িয়ে, নিচে ওই র্যাপ অন স্কার্ট পরে বেরোতাম। দিদির
পোশাকও সকাল বেলা ঐরকমই কিছু থাকত। ঘুম চোখে বেরোত ।
দুধ তখনো
বোতল। তখনো সেই একটাই শেপের বোতল, কাচের। প্লাস্টিকের পাউচ প্যাক আসেনি। সে বোতল
কোনদিন ভেঙে গেলে বোধ হয় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। প্রতিবার আগের দিনের ফাঁকা বোতল
ধুয়ে ফেরত দিয়ে ভরা বোতল আনতে হবে।
কত অসুবিধের
দিনকাল সেসব। গ্যাসের জন্য হত্যে দেওয়া এক মাস। কেরোসিনের লাইন। কারেন্ট না থাকার
জন্য হারিকেন জ্বালানো আর পরিষ্কার করা আর হারিকেনের পলতে বাড়িয়ে জিওগ্রাফির পড়া।
প্লাস্টিকের পাউচ প্যাক, ডবল সিলিন্ডার, আর বাকি সব উন্নয়ন, তার পর পরই এসে পড়বে।
দিদির পর, আমি
যখন থেকে দুধের লাইনে দাঁড়াতে শুরু করলাম তখন খুব মন দিয়ে দেখতাম দুধের ডিপোর
মেয়েদের। শীতকালে উল বুনত, গ্রীষ্মকালে গল্প। সারাক্ষণ কলকল করে কথা বলত। খুব ব্লটিং
পেপার প্যাটার্নের হত এই সব মেয়েরা। একাধিক জন একটা ঐ কাঠের তৈরি, জাল ঘেরা ঘরে
থাকত। হাতে হাতে কার্ডে দাগ দিয়ে একটা করে বোতল বা প্যাকেট দিচ্ছে, টাকা জমা নেবার
দিন ভিড়ের অস্থিরতাকে অগ্রাহ্য করে নিজেদের মধ্যে বকরবকর করে চলেছে। এই সব দিদিরা,
চুল রুক্ষ, মন রুক্ষ, পরনে ছাপার শাড়ি, চোখে কাজলহীন স্পষ্ট চাউনি, এই সব দিদিদের
জিভে অসম্ভব ধার। ঝগড়া করতে অসম্ভব পটু।
এইসব দিদিদের
প্রায়শই বিয়ে হয়না, সকালে ডিপোর কাজ শেষ করে আবার চাকরির জন্য অন্য কোথাও যাবে।
যন্ত্রপাতি অ্যাসেম্বলির কাজ করে কারখানায় কেউ বা, কেউ বা টাইপিং করে। এদেরই অনেকে
এর ঠিক দশ বছর আগে হলে, হয়ত ঐ কর্পোরেশনের টীকা দিদিমণি হত। ঘরে ঘরে এসে কব্জিতে
পিনের মত কিছু একটা ফুটিয়ে ফুটিয়ে টীকা দিয়ে যেত, আর তার হলদেটে প্লাস্টিকের চটি
পরা পা, আর একটু উঁচু করে পরা শাড়ির ছায়া দেখা গেলেই আমাদের মত বছর পাঁচেকের
বাচ্চারা খাটের তলায় সেঁধোত।
এই সব মেয়েদের
জীবনে রসকষ ছিল না তা নয়। অনেক দাদা বৌদির ছোটলোকির রোমহর্ষক গল্প, অনেক বিধবা
মায়ের দুঃখের গল্প বলতে বলতে এরা নির্বিকার মুখে লোককে দুধ দিয়ে যেত। যতদূর মনে
হচ্ছে আমি যতদিনে দুধ নিতে যেতাম, তখন প্ল্যাস্টিকের পাউচ পুরোদস্তুর এসে গেছে। ঐ
ডিপোর কেঠো একটেরে ঘরের একপাশে ঝুড়িতে থাকত দুধের পাউচ। ততদিনে হরিণঘাটার দুধ, টিকটিকি
হীন হতে শুরু করেছে। পাউচে লেখা থাকে পাস্তুরাইজড। পাস্তুর সাহেবের কেরামতি আমরা
বায়োলজি বইতে পড়ে ফেলেছি ততদিনে। প্যারালেলি,
এক সর্দারজির দোকানে মাদার ডেয়ারির দুধও পাউচে পাওয়া যেতে শুরু করেছে। সবাই বলাবলি
করছি, মাদার ডেয়ারির দুধের কোয়ালিটি হরিণঘাটার থেকে কত কত ভাল। তারপর থেকে আমরা
শিখতে শুরু করলাম সিঙ্গল টোন্ড, ডাবল টোন্ড দুধের কথা।
ধীরে ধীরে
হরিণঘাটার দুধের দিন গিয়াছে। মেট্রো ডেয়ারি , মাদার ডেয়ারি, আমূল , কত রকমের
প্যাকেটের দুধ অধিগ্রহণ করে নিল এলাকা। স্লিম অ্যান্ড ট্রিম, ফুল ক্রিমের ভেতর
বেছে নিতে পারার স্বাধীনতা এল। সরকারি
বিশ্রি দুধ কেনার বাধ্যবাধকতা আর রইল না। রাষ্ট্রায়ত্ত মোনোপলির দিন শেষ।
ইতিমধ্যে আমার
বয়স দশ ( ১৯৭৫) থেকে কুড়ি ( ১৯৮৫)। দূরদর্শনে ডিডি ওয়ান, ডিডি টু, ডিডি থ্রি এসে
গেছে। আর, ওই মাঠগুলোর একটাও আর একরকম নেই।
৪
ইতিমধ্যে একটা
ঘটনা ঘটেছে তেইশ পল্লীর মাঠকে ঘিরে। সেও শূন্যস্থান পূরণের গল্প।
প্যান্ডেল করে ওখানে কালীপূজা হত। সে বারের কালী
প্রতিমা পুড়ে গেল , কী ভাবে আগুন লেগে। তারপর শোনা গেল একজন ভক্ত মহিলা রাতে
স্বপ্ন পেয়েছেন, মা এসে বলেছেন, আমার মন্দির কর।
সেই পবিত্র
স্থানটি তেইশ পল্লীর দুর্গা মন্দির হয়ে গেল। অষ্টধাতুর মূর্তি এল। দেওয়াল উঠল,
দুর্জনে বলল, মাঠ দখলের ফন্দি। ধর্মের নামে জমি দখল।
মোটের ওপর,
আমাদের পাড়া থেকে খোয়া গেল একটি জলজ্যান্ত মাঠ।
যে মাঠটা
চৌধুরী বাড়ির মাঠ বলে খ্যাত ছিল, যেখানে কালীপুজোর আগে রাক্ষস খোক্কস বানিয়ে হাত
পাকিয়েছিল রোগা ডিগডিগে রতন, সেখানে দুটো অংশ দুভাবে কাজে লাগে , সেও ঐ সময়
নাগাদই। কার্যকরিতা এসে মাঠেদের নিরালম্ব, প্রয়োজনহীন ফাঁকা ভাব গ্রাস করেছে। সে
মাঠের একটা অংশ,ভেতরদিকটা গাড়ি রাখার গ্যারেজ হয়ে গেছে। ঘাস আগেই ছিল না ,
এখন মাঠত্বও চলে গেছে। অন্য অংশটায় রতনের
রীতিমত মূর্তি বানানোর মিনি কুমোরটুলি । সরস্বতীপুজোর পর কিছুদিন চুপচাপ থাকে।
আগস্টের মাঝামাঝি থেকে আবার ব্যস্ত। দুর্গা পুজো-লক্ষ্মীপুজো-
কালীপুজো-জগদ্ধাত্রীপুজো , একেবারে নভেম্বর অব্দি টানা ।
কালীপুজোর
রাক্ষস খোক্ষসের ব্যাপারটা ছোটবেলায় কী ভালই না লাগত। দুর্গা ঠাকুরের নাকি জয়া
বিজয়া। আর কালীর,ডাকিনী যোগিনী, পিশাচ, ব্রহ্মদত্যি, ভূত প্রেত। আসলে দুর্গা পুজোর
ভাসানের পর, জল থেকে অর্ধগলিত কাঠামোগুলো তুলে আনত রতনরা। তারপর লোকের ফেলে দেওয়া
কাপড় চোপড় থেকে কেটেকুটে ন্যাতাকানির পোশাক পরাতো, আর শনের নুড়ির চুল, বিকৃত ঠেলে
বেরিয়ে আসা চোখ আর জিভ আর বড় বড় কান মাটির দলা ঠুশে বানিয়ে, খুব চমৎকার রঙ করে সেই সব ভূতেরা রেডি হয়ে যেত, মা কালীর
সাঙ্গোপাঙ্গো হয়ে প্যান্ডেলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য। সেদিন কাগজে দেখলাম, সেই
সব ভূত এখনো হয়। আমাদের রতনেরই শুধু পদোন্নতি হয়েছে।
ডাকিনী
যোগিনীর কথা বলতেই মনে পড়ল সলিল চৌধুরীর ‘গাঁয়ের বধূ’ গানটির কথা। গল্প দিয়ে গান।
এমন উদাহরণ বাংলায় আর কটা! সেই শোন এক গাঁয়ের বধূর কথা তোমায় শোনাই শোন রূপকথা নয়
সে নয়। হেমন্তের গলা।
সে গানের একটা
জায়গা, আমরা ছোটরা , ভাল করে না বুঝলেও, আমাদের একটা দুর্দান্ত গায়ে কাঁটা দেওয়া
ফিলিং হত। হঠাৎ সুর তাল আবহ পালটে সেই জায়গাটায় কেমন যুদ্ধং দেহি পরিস্থিতি তৈরি
হত। মা বলেছিল, ওটা মন্বন্তরের কথা। আমার শুধু ভাল লাগত ওই লাইনগুলোঃ ডাকিনী
যোগিনী এল শত নাগিনী এল পিশাচেরা এল রে। শত পাকে পা দিয়া নাচে তা তা তা থৈয়া নাচে
তা তা তা থৈয়া রে।
আসলে
কালীপুজো, ডাকিনী যোগিনী, হেমন্তকালের সন্ধে, কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় অনেক ছাতিম
গাছ থেকে বিকীর্ণ কড়া ছাতিম ফুলের মাতাল গন্ধ, বিকেল থেকে ঝুপ করে সন্ধে নেমে আসার
হৈমন্তিক অনিবার্যতা, লক্ষ্মীপুজোর পর থেকেই অ্যানুয়াল পরীক্ষার পড়া তৈরির ভীষণ
তেতো অনুভূতি... ফাঁকে ফাঁকে ঐ কালীপুজোর
জন্য কেনা বাজিগুলো রোদে দেবার ছুতোয় ছাতে ওঠা আর উঁকি দিয়ে রতনের ডাকিনী যোগিনী
তৈরি দেখা। ব্যাস, ভূত চতুর্দশীর গা ছমছমে চোদ্দ পিদিম, তারপর কালীপুজোর বাজি
ফোটানো, তারপরই ভাই ফোঁটা, শেষ হলেও ইশকুল খুলে যাবে আর পরীক্ষা শুরু হবে, বুকের
ভেতর হাতুড়ির ঘা পড়ত যেন। আর , এখন ভাবলে অবাক লাগে, একটা পূর্ণিমা থেকে একটা
অমাবস্যার এই পনেরোটা দিন এত যে কিছু ধরে থাকত!
হ্যাঁ, এর
মধ্যেই কোন একটা দিন আমার জন্মদিনও পড়বে, যেটা আবার বিদিশিদের হ্যালোউইন উৎসব,
মানে সেই ভূতেরই দিন, মৃত প্রিয়জনদের জন্য বিষাদের সঙ্গে মজামাখানো উৎসব পালনের
দিন, হেমন্তে জন্ম বলেই কি আমার এত হেমন্ত ভাল লাগে? তখন পনেরো পেরোয় নি, তাই মনে
হয়নি পড়া হয়নি জীবনানন্দ, সেই ধানকাটা হয়ে যাওয়া মাঠের ছবি, হেমন্তের ওশলাগা খড়ের
বিষাদ, প্যাঁচার উড়ে যাওয়া আর ইঁদুরের খুঁদকুড়ো কুড়িয়ে নেবার আশ্চর্য ছবি মাথার
মধ্যে এসে ঢোকেনি। তবু, হেমন্ত আমাকে চিরদিন আক্রান্ত করেছে। আরো বছর দশেক পরে আমি
তো পিশাচিনীই ভাবব নিজেকে। আজও ভাবি, আমার মেয়ে যখন হলিউডি ছবির ভৌতিক রমরমার যুগে
বসে বসে ট্রল, নোম, পিক্সি, ফেয়ারি, গবলিনদের গপ্পো গেলে, আমাদের জীবন থেকে কেমন
“ওটা কুসংস্কার, ওটা বিচ্ছির, জঘন্য, ওটাকে ফেলে দাও” এমনি এক ডেটল-ফিনাইল অভ্যাসে
অভ্যাসে হারিয়েই গেল ডাকিনীযোগিনী পিশাচব্রহ্মদত্যিরা, একসময় যা ছিল গ্রাম-মফস্বল
শহরের গা ছমছমে দিনকালের নিত্য সহচর।
যেভাবে হারিয়ে
গেছে মাঠগুলো। মিলনীর মাঠেও কত না খেলা, গো-ও-ও -ল দিয়ে হো হো করে ধুলোমেখে ফেরা
ছেলেরা ছিল। সারাদিন খেলে খেলে , বাড়ি না ফিরে ফিরে, মায়েদের তিতিবিরক্ত করে করে,
সেই সব ধুলোমাখা ছেলেরা যে নি-কাজের অপরূপ উদাহরণ হয়ে ছিল, আজকের ভাল ছেলে, কেজো ,
টিউশন-ক্লাসে যাওয়া ছেলেরা তার চেয়ে কত কত দূর। মিলনীর মাঠটাকে গিলে ফেলেছে
উন্নয়ন। সেখানে একেবারে অতি সম্প্রতি
দেখলাম বিশাল এক বহুতল উঠে গেছে।
হরিণঘাটার
ফ্রোজেন ফুডসের প্যাকেট দেখেছেন কেউ ? আমি দেখেছি, বেকন। সালামি, সসেজ, হ্যাম। কোয়েল দোয়েল টার্কি।
বেকনের সঙ্গে হরিণঘাটা, একদম মেলাতে পারিনি।
হরিণঘাটা শুনলেই আমার সেই সব মেয়েদের মুখগুলো মনে পড়ে। যাদের জিভে খুব ধার, কোনদিন
বিয়ে হবে না।
কী ভালো!!
ReplyDeleteখুব সুন্দর
ReplyDelete