Sunday, July 21, 2019

মজা নয়, সত্যিই - অর্ঘ্য দত্ত






সকালে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা আর দুটো ডাইজেস্টিভ বিস্কুট নিয়ে খ এসে আমার সামনে বসল। বুঝলাম আজ ও আগেই চা খেয়ে নিয়েছে। গতরাতে ওকে মনের মতো করে সাজিয়েছিলাম। ওর মুখে এখনও লেগে আছে  বাসি সলমা জরির সেই ঝলমল। সামনে বসে অনেকক্ষণ একমনে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর ও বলল, একটা কথা বলব? আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই উঠে এসে সোফায় আমার গা ঘেষে বসলো। বললাম, বলো।
সোফার উপরে দু পা গুটিয়ে বাচ্চাদের মতো জড়োসড়ো হয়ে বসে মাথাটা এলিয়ে দিল আমার কাঁধের ওপর। তারপর মৃদুস্বরে বলল, জানো, একেক সময় না আমার নিজেকে ঠিক সম্রাজ্ঞী মনে হয়। মনে হয় আমার চেয়ে সুখী, আমার চেয়ে ধনী এই পৃথিবীতে বুঝি আর কেউ নেই। বললাম, তখন নিশ্চয় আমাকেই সম্রাট মনে হয়! কিন্তু, শুধুই একেক সময়, সবসময় নয়?
না, সবসময় নয়। সেই ছোটবেলা থেকে আমার একার যে তেপান্তরটাকে আগলে রেখেছি সেখানে তখন হুহু করে সুখের হাওয়া বয়, ফুলেল গন্ধ ভাসে। কী এক শান্তির ছায়ায় আকাশটা যেন মায়াবী হয়ে ওঠে। খালি গান পায়। কী যে তৃপ্তি তখন!
 
বললাম, আর, অন্য সময়ে?
অন্য সময়ে? ঠিক বুঝতে পারি না। খালি কান্না পায়। মনে হয়, আমি যেন এক দুয়োরানি। ঐ তেপান্তরের এক কোনে আমার অবহেলার বাস। আর তুমি ঐ মাঠ জুড়ে কোনো সুয়োরানির ছবি আঁকার চেষ্টা করে যাচ্ছ। বারবার আঁকছ, আর মুছছো। আমার কোনো ভূমিকাই নেই তাতে।
দুহাত দিয়ে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বললাম, চমৎকার! তুমি লেখ না কেন এসব কথা?
ঠাট্টা করছ? ঠোঁট ফোলালো খ। ওর ঠোঁটের ওপর ভোর রাতের শিশির লেগে আছে। নিজের ঠোঁট দিয়ে একটু শিশির শুষে নিয়ে বললাম, না না, ঠাট্টা করবো কেন! কিন্তু হঠাৎ তোমার এমন ভাবনার কারণ? ক‌ই আগে তো কখনও এমন বলো নি?
আগে তো কখনো তোমাকে এমন অচেনা লাগত না। আগে কখনো মনেও হয়নি তোমার ভেতরে কোথাও আমার অজানা অচেনা এতটুকু কিছু লুকানো আছে। কিন্তু যেদিন থেকে এই লেখালেখি শুরু করেছ, তুমি যেন বদলে যাচ্ছ। টের পাই তোমার ভেতরে সব সময় যেন কত দ্বন্দ্ব, কত সংকট, জটিল চিন্তার স্রোত অবিরাম বয়ে চলেছে। কী যেন একটা সব সময় খুঁজে চলেছ!
তাই বুঝি তোমার মনে হলো যে আমি একজন সুয়োরানি খুঁজে বেড়াচ্ছি?
না ঠিক তা যে নয় সে কথা আমিও বুঝি। আচ্ছা বলোতো, এই যে তোমার কবিতায় এত প্রেম, এত বিষাদ, এত কাতরতা এসব কি শুধুই কল্পনা?
 
কী আশ্চর্য! কবিতা কি অটোবায়োগ্রাফি? তাহলে গল্পকারদের লেখা গল্পগুলো নিয়েও কি তোমার মনে এই একই প্রশ্ন আসে?
আচ্ছা বেশ, তা না হয় হলো, বলোতো তুমি যা লেখো তা নিজেই সব বিশ্বাস করো?
অবশ্যই করি, তা না হলে লিখব কেন?
 
বলোতো, যতটা মুখে বলো, তুমি কি সত্যিই ততটা সেকুলার। কোন মানুষকে তোমার ভালো লাগা মন্দ লাগায় কখনো তার ধর্মের কোন প্রভাব থাকে না?
 
একদমই নয়। কোন কোন ধর্মীয় লোকাচারে অভ্যস্ত হয়ে গেছি হয়তো, কিন্তু আমার কাছে কোন ধর্মীয় অনুষঙ্গ কখনো জীবন বা ভালোবাসার চেয়ে বড় হয়ে দেখা দেয় নি। কিন্তু তোমার আজ হলো কি! এত কঠিন কঠিন প্রশ্ন করছো তুমি কি আমার সঙ্গে স্টুলিশ খেলছো?
সেটা আবার কী?
কেন, ফেসবুকে দেখো না নাম গোপন করে নানান রকম প্রশ্ন করা হয়?
না না আমি স্টুলিশ-ফুলিস জানিনা। তবে আরেকটা কঠিন প্রশ্ন করবো, উত্তর দেবে?
বলো?
তুমি কি বাইসেক্সুয়াল?
হা হা হা।
 
হাসছো যে বড়!
 
হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
তোমাকে আজকাল পুরুষ বন্ধুদের এমন সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসতে দেখি। তাদের কারও সঙ্গে সামান্য মনোমালিন্যে এত কষ্ট পেতে দেখি। কখনো কখনো আমার বড় ঈর্ষা হয় জানো। সত্যি করে বলো না গো।
আমি নিজেই নিশ্চিত করে জানলে তো বলব! তবে ফ্রয়েড সাহেব বলে গেছেন, পৃথিবীর সব মানুষই নাকি আসলে উভকামী। এমনকি সেই যৌন প্রবণতা মাপার জন্য কেন্স সাহেব নাকি কি সব স্কেল-টেল‌ও তৈরি করে গেছেন। তবে আমি তো কখনো মাপাইনি। তুমি চাইলে...
আবার হাসছ?
 
আচ্ছা বাবা, হাসব না। তবে, সত্যিই বাইসেক্সুয়াল হলেও বা আর কী লাভ বলো? ডেটিং-টেটিং তো সেই কোন কালেই বন্ধ হয়ে গেছে!
 
এ কথার মানে? আবার মজা করছ?
মজা নয়, সত্যিই। উডি অ্যালেন সাহেব নাকি বলেছিলেন উভকামী হলে শনিবার রাতে ডেইটে যাওয়ার সুযোগ দ্বিগুণ হয়ে যায়। আমার তো এখন কিবা সোম কিবা শনি! কিন্তু তুমি যে এই সাত সকালে বসে আমার সঙ্গে আড্ডা মারছো নূপুর যদি হঠাৎ এসে দেখে...
খ মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ায়। ভ্রুভঙ্গি করে বলে, নূপুর, সে আবার কে?
তাকেও চেনো না? সেই তো আমার সুয়োরানি। আমার বৌ। আমার ছেলের মা।
টেবিল থেকে চায়ের কাপ প্লেট তুলে নিয়ে যেতে যেতে খ বলে, আচ্ছা বাবা, পালাচ্ছি। ইশ্! কথায় কথায় কত দেরি হয়ে গেল! খেয়াল‌ই করিনি। সাড়ে আটটা বেজে গেছে! আমার বরের আবার অফিস যাওয়ার টাইম হয়ে এল। এখুনি তার তাড়া দেওয়া শুরু হল বলে। টা টা।
আর ঠিক সেই সময়ই কিচেন থেকে নূপুরের আওয়াজ ভেসে এল, দয়াকরে আর মোবাইলে মুখ গুঁজে বসে থেকো না যেন, তাড়াতাড়ি স্নানে যাও।


2 comments:

  1. বড্ড তাড়াহুড়ো করে শেষ করলেন। আরও খানিকটা নিজকে ভেঙেচুরে এগিয়ে যাবার দরকার ছিল। গল্পের দাবী কিন্তু সেই ইঙ্গিতই করে।

    ReplyDelete
  2. গল্পটা কবিতা হয়ে গেল। শর্মিষ্ঠা

    ReplyDelete

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

চলচ্চিত্র নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত? ঋত্বিক ঘটক :   চলচ্চিত্র তৈরির প্রাথমিক লক্ষ্য মানবজাতির জন্য ভাল কিছু করা। যদি আপ...

পাঠকের পছন্দ