Sunday, July 21, 2019

নীলপাখি মাছভাজা ও চারপুরুষের মদ -- সুবল দত্ত






খেদ
এখনো কোনো কোনো সাহিত্য ও আড্ডায় নাম গোত্রের হিসেব নিকেশ চলে তখন ধেয়ে যায় ভিকিরি মন আশায় একঝলক শুনতে যদি পাই সেই প্রকৃতির কোলে শেষ প্রকৃত বৈঠকের কথা কোথাও প্রসঙ্গ ওঠে যদি পুরোনো ক্ল্যাসিক,যথা সন্তোষ কুমার ঘোষের শেষ নমস্কারের দ্বিতীয় খন্ডের শুরুয়াত,আতিপাতি করে খোঁজে আমাকে আমার মন কোথাও তিলমাত্র যদি আমি কোথাও থাকি তো কখনো কোথাও কোনও আলোচনায় সুনীল শক্তির সমীর রায়চৌধুরীর চাইবাসার বাসাতে আড্ডার কথা আসে, কুকুরের মত আমার কান খাড়া থাকে,শেষে বিমর্ষ হই আমি নেই যদি কোনো পত্রিকাতে আলোচনায় কমল চক্রবর্তীর কথা থাকে বা তেনারই কোনো লেখা আদিতে সেই ভুবন মোহন নিসর্গ থাকে তো, খুঁজে খুঁজে নিরাশ হতে হয় সেই অত্যাশ্চর্য মায়াময় অনুভব কেউ কি মনে রেখেছে ওই প্রকৃতির নিসর্গ ক্রোড়ে চার জেনারেশনের প্রকৃত একান্ত বৈঠক? এখন যাঁরা স্বর্গীয়,তাঁদের আলোচনা গ্রন্থে ওই কথাটি কেন নেই ইহ বাহ্য এখন যে বেঁচে বর্তে, তেনার দায় না থাকলেও বাকি আমার ভিতরে অনাদায় ভীষণ কাজ করছে আমি তা প্রকাশ না করে থাকতে পারছিনা
টেনিয়া   
তিন নৌকোয় দুপা ও বডি রেখে চাইবাসায় মানুষ হচ্ছিলাম এক নৌকো পদার্থবিজ্ঞান ওই নিয়ে আমার ঘোর উদ্দেশ্য,কিছু করে দেখাতে হবে স্বপ্ন নভঃপদার্থবিদ্যায় পারদর্শী হওয়া এদিকে যার আশ্রয়ে থেকে পড়াশুনো তার দোকানপাট বাজারহাট সব সামলে দেওয়া ছিল বিনিময় শর্ত সেটি ছিল দু নম্বর নৌকো আর তৃতীয় নৌকো ছিল আমার অস্তিত্ব আমার সাহিত্য চেতনা,আমার ক্রিয়েটিভিটিসন্তোষ কুমার ঘোষের রীতিমতো ঘনঘন আগমন ছিল চাইবাসাতে পাল্লা দিয়ে যখন তখন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আসা সমীর রায়চৌধুরী ছিলেন ডিস্ট্রিক্ট ফিশারী অফিসার সরকারী দাপটে থাকতেন তাঁর শ্বশুরবাড়ি চাইবাসাতেই অতএব আমার ছিল তাঁর বাসাতে অবাধ যাওয়াআসা কোলকাতা থেকে শক্তি সুনীল বা কেউ এলেই ছায়ার মত হাজির হতো কমলদা,কমল চক্রবর্তী তখন মোবাইল ছিলনা ল্যান্ডফোনে জানাজানি হতো সন্তোষদা চাইবাসাতে এসেছেন সেদিনই সমীরদার বাড়িতে বিকেলে গিয়ে শুনলাম আগামীকাল এক অপূর্ব সাইটে যাওয়া হবে যথারীতি কমলদা সকালেই চাইবাসাতে হাজির বলে রাখা ভালো,সমীরদার সাথে আলোচনা করে আমি ও আমার বন্ধু সুব্রত একটা পত্রিকা বের করতে সংকল্প করেছিলাম
অবাধ এন্তার মদ
জীপ গাড়িতে তোলা হলো চারপাঁচ খানা দামী মদের বোতল প্রচুর মাছ ভাজা স্যালাড খাবার ও বসার যাবতীয় সরঞ্জাম আমি ও সুব্রত চতুর্থ পরম্পরা সেই অর্থে টেনিয়া অবশ্য এর আগে পত্রিকার জন্য ফান্ড পেতে সিংভূম জেলার ডি সি মন্ত্রেশ্বর ঝা এর সাথে শুধু আমরা দুজনই দু তিনবার বৈঠকে বসেছি এহেন ছিলাম আমরা জীপ গাড়িতে আমরা দুজন কারে করে পরে এলেন তিনজন নামীদামী আমি যেভাবেই আসি, বেলা নয়টাতেই পুটিদা পাহাড়ের ঘন ছায়া ভেদ করতে দশ মিনিট তারপর মহুলবন ও কেন্দুর জঙ্গল পেরোতেই শীত শীত করতে লাগলো এরপর ঢালু রাস্তা বেয়ে নামছি তো নামছিই যেন নামার শেষ নেই শেষমেষ এলাম টন্টো ঝিল এমন জলাধার যেন আর নেই পার নেই গোল গোল নানান শেডের নুড়ির ওপর স্বচ্ছ তরঙ্গ জলের গভীরতা নেই যেন হেঁটেই মাঝ অব্দি যাওয়া যায় একদিকে একটা ছোটো পাড় বা আল সেখান থেকে নুয়ে পড়ছে নারঙ্গী পলাশ ফুল জলে পড়ে সেখানটা রাঙিয়ে দিয়েছে একটু এগিয়ে জলে দাঁড়ালাম আমার পা ছোঁবার জন্যে একদল কুচো মাছ এসে পায়ের চারপাশে ঘুরতে লাগলো একঝাঁক নীলপাখি নানা ডিজাইন তৈরি করে ঝিলের জল ছুঁয়ে আমাকে ঘিরে পাক খেয়ে উড়ে গেল আমার শরীরে রোমাঞ্চ
রসাত্মবোধ?
একটু পিছন ফিরে তাকাতেই দেখি সবাই পান শুরু করে দিয়েছে এসব দেখাদেখি নয় যেন এইজন্যেই এখানে আসা দু পাত্তর পেটে পড়তেই শুরু হয় আইকোনোক্লাস্টিক বিষয় এর মধ্যে ঢোকে টি এস এলিয়ট ও গীন্সবার্গ এখানে রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দ ধারেকাছে নেই পূবদিক পিছনে খুব কাছে একটা পাহাড় সূর্য ঢেকে রয়েছে তাই আকাশ গভীর নীল স্বাভাবিক ঝিলের রঙ নীল মাঝে মাঝে ভারী টপিক্স থেকে মন সরে যাচ্ছিল অবর্ণনীয় প্রকৃতি ক্যানভাসে মাঝে আলফ্রেড প্রুফ্রক নিয়ে সন্তোষদার সাথে সুব্রতর বচসা ‘Then how should I begin/To spit out all the butt-ends of my days and ways?...’এইনিয়ে ম্যাটার খারাপ দিকে যাচ্ছে দেখে, সমীরদা দেশাত্মবোধক গান শুরু করে দিলেন কমলদা আরো চালাক একটা টেপ রেকর্ডার নিয়ে এসে ছিল সেটা চালু করে দৌড়ে গেল পাশের ঝোপ থেকে কানফাটা ঝিঝি পোকার ডাক রেকর্ড করতে এমন সময় খুব কাছ দিয়ে ময়ূরকন্ঠি নীল একটা পাখি ট্টি ট্টি করে ডাকতে ডাকতে সন্তোষদার মাথায় চক্কর দিয়ে ঝিলের দিকে একটা ঝোপের কাছে উড়ে গেল সন্তোষদার মুখে হাভানা চুরুট ওনার প্রকৃতির নিসর্গ বোধ নেশার সাথে মর্মে ঢুকেছে বোধহয় চুরুট মুখে ওই অবস্থাতেই আমার নীল পাখিটি আমার নীল পাখিটি ট্টি ট্টি ট্টি বলতে বলতে ধেয়ে গেলেন ঝোপের আড়ালে কিছুক্ষন চুপ আমার পেটেও তখন দাহ্য তরল মনে হল আমার আর বুঝি সময় হবেনাআমি পত্রিকার নামকরণ নিয়ে কথা পাড়লাম সমীরদা কিছু বলতে গিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন তাঁর দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলাম, সন্তোষ কুমার ঘোষের হাতে একটা উইঢিবির ভাঙা চুড়ো মসৃণ ও সোনার মত উজ্জ্বল হলুদ রঙের সমীরদার নেশা ছুটে গেছে প্রায় কাঁপতে কাঁপতে বললেন সর্বনাশ! এই ধরনের ঢিবিতে কেউটে সাপ থাকে ঢিবি দেখে একদম সিয়োর হলেন কমলদাকে ডেকে আনা হলো আমরা সবাই টলতে টলতে ঝিল থেকে একটু দূরে অন্যত্র গেলাম তারপর কি হলো না হলো খুব একটা মনে নেই কিন্তু আমার পত্রিকার নামকরন হয়ে গেল উইঢিবি    
     


2 comments:

  1. কোনও কথা হবে না । ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে আমি unknown কেন হবো । আমি উদয়েন্দু

      Delete

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

চলচ্চিত্র নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত? ঋত্বিক ঘটক :   চলচ্চিত্র তৈরির প্রাথমিক লক্ষ্য মানবজাতির জন্য ভাল কিছু করা। যদি আপ...

পাঠকের পছন্দ