সেই ছোট্টবেলায় যখন
রবিবার প্রত্যেক বাড়ির সামনে থেকে ভেসে আসতো মহাভারতের সুর,
চিত্রহারের সিনেমার গান আর দুপুরের জননীর সুপ্রিয়া দেবীর কণ্ঠ,
তখন আমার জননী আমার মতো ফাঁকিবাজ মেয়েকে অ থেকে চন্দ্রবিন্দু আর
১ থেকে ১০ পর্যন্ত শেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই ছোটোবেলা থেকে মাতাশ্রী
আমাকে বলে আসছেন, আমার মাথাই নাকি কিছুই পড়া ঢোকে না।
আমাকে পড়াতে গিয়ে মা এর মুখস্ত হয়ে যায়,আমার হয় না!
এমনকি মাধ্যমিকের টীকা, রচনাগুলোও! মা পরীক্ষা দিলে আমার
থেকে যে বেশী নম্বর পেতো এবিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই! তা শিখিয়ে পড়িয়ে মা ভর্তি করে
দিয়ে এল বিবেকানন্দ শিশু মন্দিরে।
ছোটোখাটো প্রাথমিক স্কুল। যদিও দু দশক আগে সেই স্কুল পার করে এসেছি, তবুও ঐ ছোট্টো স্কুলটার স্মৃতি আমার জীবনের অনেকখানি জায়গা জুড়ে আছে। খয়েরি রঙের সাদা ফিতেওয়ালা ওয়াটার বটল্, সামনে দুটো পকেটওয়ালা ডাকব্যাগ, আর ক্যাডবেরির মতো পেন্সিল বক্স নিয়ে শুরু হয়েছিল স্কুলযাত্রা। কিছুদিন পরে দেখলাম সবাই নিয়ে আসছে টিনের বাক্স। তাই আমার জন্য ও কেনা হল। যেন প্যান্ডোরার বক্স। আর সেই বাক্স খুললেই বেরিয়ে পড়তো কিছু বই আর রুলটানা খাতা, সাদা খাতা। সঙ্গে পেন্সিল বক্স আর টিফিন বাক্সও। বাক্সটার ওপর টা সজ্জিত হয়েছিল নানান রকম স্টিকারে।
একটা বড় থামওয়ালা বারান্দার দুদিকে দুটো ক্লাস হতো। মাটিতে শতরঞ্জি পেতে। সবার সামনে হাত ছোট ছোট কাঠের ডেস্ক। তলায় ব্যাগ রাখা আর ওপরে লেখার জন্য। সেই স্কুলের নিয়ম ছিল শিক্ষক শিক্ষিকাদের দাদা,দিদি বলে সম্বোদ্ধন করতে হবে। সেই স্কুলের প্রথম শিক্ষক হিসাবে পাওয়া গনেশ দাদাকে। উনি কি পড়াতেন আমার এখন আর মনে নেই তবে হাতে পেন দিয়ে সুন্দর ছবি একেঁ দিতেন। কখনো পাল তোলা নৌকা বা কখনো ফুল! ওটাই মনে হয় তখন ছিল স্কুল যাওয়ার আকর্ষন। আর ছিলেন সুকুমার দাদা। আমাদের পিটি শিক্ষক। সে ছিল এক অদ্ভুত ক্লাস! কী সুন্দর একসঙ্গে সবার হাত উঠছে, নামছে... একসঙ্গে পা উঠছে, আবার নামছে! পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, আসন শেখানো, ফাঙ্কশন সবই হতো। ছিলেন শুক্লা দিদি, জ্যোষ্তনা দিদি, কল্যাণী দিদি। হয়তো এখনকার কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলির মতো এতো সাজানো গোছানো ছিল না, কিন্তু দাদা দিদিদের ব্যবহার ছিল খুবই আন্তরিক। অনেককেই দেখতাম খাঁচাগাড়ি করে স্কুলে আসত। বাড়ি থেকে ইস্কুল কাছে হওয়াতে আমি ছিলাম ও সুখে বঞ্চিত। এই স্কুলটাতে পড়েছিলাম দুবছর। এরপর আবার আমাকে বড়স্কুলে দিতে হবে, তাই মা বাবার আবার শুরু হল আমাকে নিয়ে যুদ্ধ। কি ঝামেলা! বেশ ছিলাম! কোথা থেকে জোগার হল একটা গাইডবুক। ইস্কুলে ভর্তি নয়তো যেন লটারী পাওয়া। বাড়ি থেকে পইপই করে শিখিয়ে দিয়েছিল আগে পুরো প্রশ্ন পড়বে তারপর উত্তর লেখা শুরু করবে। এডমিশন টেস্টে পুরো প্রশ্ন পড়ে দেখা গেল কোথাকার মাটির পুতুল বিখ্যাত, তারামণ্ডলের প্রতিষ্ঠাতা কে এই সব। এইটে আমায় শেখানো হয় নি বাড়ি থেকে। আমার পাশে বসা মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো, আচ্ছা তারামণ্ডলের প্রতিষ্ঠাতা কি মেঘনাদ মন্ডল??সেই উত্তরের জায়গায় ফাঁকা থাকলেও বাকিগুলোর মনে হয় সঠিক উত্তরই দিয়েছিলাম। বাবা মা র এতো খাটাখাটনির ফলস্বরূপ আমার প্রথম শ্রেনীতে উত্তরন। তবে ওই পুরোনো স্কুলে দোতলায় ছিল ক্লাস টু।সিঁড়িটা ছিল কাঠের। একটু উঠলেই ক্লাস টুর দিদিরা বকত। ওটা দিয়ে উঠতে গেলে নাকি বড় হতে হয়। তখন শুধু ভাবতাম কবে উঠবো সেই সিঁড়িটা দিয়ে! সেই সিঁড়িটা দিয়ে আজও আমার ওঠা হল না....!!
চলে এলাম নতুন স্কুলে। নতুন পরিবেশ। নতুন দিদিমনি। যেখানে জীবনের ১২টি বছর ! কিন্তু প্রাইমারী স্কুলের
২টি বছরের দিনগুলো ছিল আমার কাছে রঙিন রাঙতা মোড়া লবেঞ্চুসের মতো। তার পরতে পরতে মিশে আছে নানান স্বাদ। এর স্বাদটা বোধহয় থেকে যাবে সারাটাজীবন!
ছোটোখাটো প্রাথমিক স্কুল। যদিও দু দশক আগে সেই স্কুল পার করে এসেছি, তবুও ঐ ছোট্টো স্কুলটার স্মৃতি আমার জীবনের অনেকখানি জায়গা জুড়ে আছে। খয়েরি রঙের সাদা ফিতেওয়ালা ওয়াটার বটল্, সামনে দুটো পকেটওয়ালা ডাকব্যাগ, আর ক্যাডবেরির মতো পেন্সিল বক্স নিয়ে শুরু হয়েছিল স্কুলযাত্রা। কিছুদিন পরে দেখলাম সবাই নিয়ে আসছে টিনের বাক্স। তাই আমার জন্য ও কেনা হল। যেন প্যান্ডোরার বক্স। আর সেই বাক্স খুললেই বেরিয়ে পড়তো কিছু বই আর রুলটানা খাতা, সাদা খাতা। সঙ্গে পেন্সিল বক্স আর টিফিন বাক্সও। বাক্সটার ওপর টা সজ্জিত হয়েছিল নানান রকম স্টিকারে।
একটা বড় থামওয়ালা বারান্দার দুদিকে দুটো ক্লাস হতো। মাটিতে শতরঞ্জি পেতে। সবার সামনে হাত ছোট ছোট কাঠের ডেস্ক। তলায় ব্যাগ রাখা আর ওপরে লেখার জন্য। সেই স্কুলের নিয়ম ছিল শিক্ষক শিক্ষিকাদের দাদা,দিদি বলে সম্বোদ্ধন করতে হবে। সেই স্কুলের প্রথম শিক্ষক হিসাবে পাওয়া গনেশ দাদাকে। উনি কি পড়াতেন আমার এখন আর মনে নেই তবে হাতে পেন দিয়ে সুন্দর ছবি একেঁ দিতেন। কখনো পাল তোলা নৌকা বা কখনো ফুল! ওটাই মনে হয় তখন ছিল স্কুল যাওয়ার আকর্ষন। আর ছিলেন সুকুমার দাদা। আমাদের পিটি শিক্ষক। সে ছিল এক অদ্ভুত ক্লাস! কী সুন্দর একসঙ্গে সবার হাত উঠছে, নামছে... একসঙ্গে পা উঠছে, আবার নামছে! পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, আসন শেখানো, ফাঙ্কশন সবই হতো। ছিলেন শুক্লা দিদি, জ্যোষ্তনা দিদি, কল্যাণী দিদি। হয়তো এখনকার কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলির মতো এতো সাজানো গোছানো ছিল না, কিন্তু দাদা দিদিদের ব্যবহার ছিল খুবই আন্তরিক। অনেককেই দেখতাম খাঁচাগাড়ি করে স্কুলে আসত। বাড়ি থেকে ইস্কুল কাছে হওয়াতে আমি ছিলাম ও সুখে বঞ্চিত। এই স্কুলটাতে পড়েছিলাম দুবছর। এরপর আবার আমাকে বড়স্কুলে দিতে হবে, তাই মা বাবার আবার শুরু হল আমাকে নিয়ে যুদ্ধ। কি ঝামেলা! বেশ ছিলাম! কোথা থেকে জোগার হল একটা গাইডবুক। ইস্কুলে ভর্তি নয়তো যেন লটারী পাওয়া। বাড়ি থেকে পইপই করে শিখিয়ে দিয়েছিল আগে পুরো প্রশ্ন পড়বে তারপর উত্তর লেখা শুরু করবে। এডমিশন টেস্টে পুরো প্রশ্ন পড়ে দেখা গেল কোথাকার মাটির পুতুল বিখ্যাত, তারামণ্ডলের প্রতিষ্ঠাতা কে এই সব। এইটে আমায় শেখানো হয় নি বাড়ি থেকে। আমার পাশে বসা মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো, আচ্ছা তারামণ্ডলের প্রতিষ্ঠাতা কি মেঘনাদ মন্ডল??সেই উত্তরের জায়গায় ফাঁকা থাকলেও বাকিগুলোর মনে হয় সঠিক উত্তরই দিয়েছিলাম। বাবা মা র এতো খাটাখাটনির ফলস্বরূপ আমার প্রথম শ্রেনীতে উত্তরন। তবে ওই পুরোনো স্কুলে দোতলায় ছিল ক্লাস টু।সিঁড়িটা ছিল কাঠের। একটু উঠলেই ক্লাস টুর দিদিরা বকত। ওটা দিয়ে উঠতে গেলে নাকি বড় হতে হয়। তখন শুধু ভাবতাম কবে উঠবো সেই সিঁড়িটা দিয়ে! সেই সিঁড়িটা দিয়ে আজও আমার ওঠা হল না....!!
চলে এলাম নতুন স্কুলে। নতুন পরিবেশ। নতুন দিদিমনি। যেখানে জীবনের ১২টি বছর ! কিন্তু প্রাইমারী স্কুলের
২টি বছরের দিনগুলো ছিল আমার কাছে রঙিন রাঙতা মোড়া লবেঞ্চুসের মতো। তার পরতে পরতে মিশে আছে নানান স্বাদ। এর স্বাদটা বোধহয় থেকে যাবে সারাটাজীবন!
No comments:
Post a Comment