Sunday, July 21, 2019

কনফেশন বক্সে কমলাসোন্দরি-- মোনালি






পর্দার অন্তরালে,  শ্রডিঞ্জারের বক্সে বেড়ালের পরিবর্তে আমায় রাখিলে একমাত্র একটি সম্ভাবনারই উদয় হয়, তাহা হইল... আদ্যন্ত এক অতি সাধারণ ভেতো ও ভীতুপ্রকৃতির অসামাজিক জীব , যে কিনা কোনও বলিষ্ঠ বিশ্বস্ত স্কন্ধ পাইলে, তাহার আড়ালে লুকাইয়া রহিতে পছন্দ করে। 

অন্যান্য সকল জীবের মতনই আমারও সুদীর্ঘ জীবন ঘনঘটাময় হইয়া আছে ঘটনায়। জ্ঞানচক্ষু উন্মীলনের কাল হইতে দেখিতেছি তো। বিস্মৃতিতে বহু ফাইল তলাইয়া গিয়াছে নিশ্চিত, তবু কুটো কুটি যাহা পড়িয়া আছে....তাহাদের মধ্যে অমূল্য রতনের মতন আভাময় হইয়া আছে সেই সকল স্মৃতিবৃন্দ, যাহারা ক্ষণিকের জন্য হইলেও অতিরিক্ত প্রেমরসসিক্ত।

আমার রমণীয় প্রথম এবং অসহনীয় শেষ প্রেম এক আমি'র সাথে হইয়াছিল যে অন্য কোনও গ্রহে ( যাহা আমাদের পৃথিবীর নিতান্ত যমজ)  আমারই মত করিয়া কালানিপাত করিতেছিল, আজো করিতেছে। যতদিন আমি থাকিব, সেও থাকিবে আমার সাথে সাথে। 

সেই অন্য আমি'র হস্তে নিজেকে নিঃশর্তে পরিপূর্ণরূপে সমর্পণ করিয়া ফেলিবার ফলে , নিতান্তই তাহার নিকট আমি টেকেন ফর গ্রান্টেড! সে, তাহার ইচ্ছামতো,  আমার শরীর -মন - আত্মাকে টুকরো টুকরো করিয়া নিষ্ঠুর খেলা খেলিয়া চলিতেছে, অনবরত! 

পুতুল খেলিবার বয়স অতিক্রান্ত হইলে, এই পৃথিবীর কাহারও সহিত নিজ মিল খুঁজিয়া না পাইয়া একাকী নাকাল হইয়া  আমি যমজ গ্রহের যমজ আমি'র সহিত বন্ধুত্ব করিলাম। তাহার সহিত হাসিয়া খেলিয়া বেড়াইতাম। স্কুল - লাইব্রেরি, ওঠা - বসা,  খাওয়া - দাওয়া, মায় টয়লেট - পিরিয়ড পর্যন্ত একসঙ্গে। 

ইতোমধ্যে, অতিরিক্ত কনজারভেটিভ ও অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে বহু বসন্ত পার্থিব অপ্রেমে সাদা-কালো কাটিয়া গিয়াছে। 

ঈশ্বরী পাটনী'র নিকট অন্নপূর্ণার নিন্দাচ্ছলে পতি-প্রশংসা বা রাধার অন্তরের ব্যাথা বুঝিতে এ বৃক্ষে এত এত বর্ষ-বলয় ঘিরিতে হইয়াছিল যে,  ধরা-ছোঁয়ার নাগালের প্রেমকে চিনিতে জানিতে শুনিতে পারিবার পূর্বেই সে প্রেম গিয়াছে "অন্য কোথা, অন্য কোনোখানে".... 

অভিজ্ঞতা কহিতেছে আমিমগ্ন মহিলা বা পুরুষের প্রতি বিপরীত লিঙ্গের আকর্ষণ অতি তীব্র, যাহা উভয় পক্ষেরই নিদারুণ দুঃখের কারণ হইয়া উঠে। যাহার জন্য কোলাহল, তাহার মন পড়িয়া থাকে সুদূরে....কলরোলে বুঝিতে অসুবিধা হয়....কে নিছক ফান লাভিং, কে হৃদয়ের দক্ষিণ দুয়ারে কড়া নাড়িতে চাহিতেছে, কে নিঃশব্দে আত্মাকে স্পর্শ করিয়া  সাড়া না পাইয়া পৃথিবীময় দুঃখের সার বিলাইয়া বেড়াইতেছে আর কেই বা রুদ্ধদ্বার কষাঘাত - পদাঘাতে খুলিতে না পারিয়া নিজের চতুর্দিকে দেয়াল তুলিয়া সমাধিস্থ হইবার তোড়জোড় করিতেছে! (এক-দুই  দশক তফাতে, এ বঙ্গভূমে প্রেম এত সুলভ ছিল না যে!) 

প্রকৃতপক্ষে, ক্ষিদের তাড়নায় অন্য আমি'র ঠোঁট হইতে মুখ তুলিয়া বিস্তীর্ণ ভূমির দিকে ফিরাইলে... বাস্তবিক সমস্তটাই বেবাক ফাঁকা দেখিতে পাইলাম ! তখন, এক অসামঞ্জস্যপূর্ণ পরিস্থিতির সহিত প্রতিপলের লড়াই শুরু হইয়া গেল....

শরীর চলিতে রহিল শিকারীর  অক্ষরেখা ধরিয়া, মন পড়িয়া থাকিল না-ছুঁতে পারা দ্রাঘিমার গোলাপ-সন্ধ্যা-বাসরে। আত্মা খুঁজিয়া ফিরিল তৃতীয় মাত্রার হৃত আশ্রয়.....

কাহার সহিত যেন কথা হইয়াছিল শেষ টেলিফোনে.... তাহার পর দশক দশক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চলিতেছে ভারী মন লইয়া এক শহর হইতে অন্য শহরে! অথচ টেলিফোনের ওপারের মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরত্ব ছোঁওয়া হয় নাই! 

যখন  বৃষ্টি তুমুল আর কাহারো ভরসাযোগ্য  হাতে হাত রাখিবার লোভে মধ্য রাত্রে ঘুম ভাঙিয়া যায়....তখন সে হাত.... অন্য কোন কোয়ান্টাম বিশ্বের অনিশ্চয়তায় মিলাইয়া যাইতে থাকে,  যাহার খোঁজ অজানা! 

বয়স বাড়িলে এমনিতেই বাল্যসম্পর্ক নষ্ট হইয়া পড়ে আর ইহা তো কোনও এক অসম্ভবসম্ভবপটীয়সীর সহিত সখিত্ব! যাহার মাংসে মজ্জায় হৃদয়ে ফুসফুসে সুদূরকল্পিত কনসেপ্টের শূন্যতা। সে কীরূপে সুখ আনিয়া দিবে, এ আবদ্ধ ধরাধামে  !

কেবল অনন্ত যুদ্ধ করিতে পারি... কাঁদিতে পারি, সিস্টেম ব্রেক ডাউন হইলে  তাহার ঘূর্ণিপাক শূন্যতার গভীরতর গভীরে তলাইয়া যাইতে পারি.... 

যে স্থানে যাইবার ছিল তাহা সুদূর হইয়া পড়ে, যাহাকে ঘনঘোর প্রমিসে বাঁধিতে চাহিতেছিলাম সে বাঁধনছাড়া হইয়া যায়, যথায় প্রবল কলরব করিবার প্রয়াস ছিল তাহা অনন্ত নীরবতা হইয়া শূন্যতার ধাপগুলিতে অতিরিক্ত
গা ছমছম এফেক্ট জুড়িতে থাকে।

আপনি বলিবেন ন্যাকা, তিনি বলিবেন, অহংকারী, উনি বলিবেন স্নব, বাড়াবাড়ি, ইনি বলিবেন আহ্লাদী, অ্যাটেনশন সিকিং...... সকলে একযোগে বলিয়া উঠিবেন, ইহা অতি অপাচ্য প্রলাপ! 

কাহারো কথায় কীই বা আসে যায়!  আমি বরং আমার অন্তরস্থ
 আমি'কে যথাস্থানে রাখিয়া এক ভীত চকিত বন্য বরাহের মতো এতটুকু আশ্রয় খুঁজি.... 

সেই আশ্রয় যাহা আমার  সমস্ত প্রাণশক্তি নিংড়াইয়া লওয়া অস্বাভাবিক বৃহৎ মস্তিষ্কটিকে, স্তব্ধ রক্তপ্রবাহকে , বিষাক্ত মাংসপিন্ডগুলিকে  জীবন  না হউক, এক পশলা মৃত্যু উপহার দিতে পারে


No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

চলচ্চিত্র নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত? ঋত্বিক ঘটক :   চলচ্চিত্র তৈরির প্রাথমিক লক্ষ্য মানবজাতির জন্য ভাল কিছু করা। যদি আপ...

পাঠকের পছন্দ